সমন্বয়হীনতায় মারাত্মক ঝুঁকিতে কয়েক লাখ গার্মেন্টকর্মী,আসা যাওয়া বিড়ম্বনা ।
মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে দেশের কয়েক লাখ গার্মেন্টকর্মী। গত দুই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ঢাকা গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের আশপাশের গার্মেন্টগুলোতে হাজির হয়েছে। এতে করে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে বলে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হতে থাকলে গত শনিবার রাতে গার্মেন্টশ্রমিকদের ঠেকাতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যদিও উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্প কারখানা খোলা রাখার সুযোগ দেয়া হয় জনপ্রশাসনের প্রজ্ঞাপনেই। গত ১ এপ্রিল সরকারি ছুটি বাড়িয়ে দেয়ার প্রজ্ঞাপনে এই সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়।
তিনি জানান, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও তার পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এর সাথে মার্চের ২৯, ৩০, ৩১ এবং এপ্রিলের ১, ২ তারিখ সাধারণ ছুটি সংযুক্ত করা হয়েছে। এর পর ৩ ও ৪ এপ্রিল আবার সাপ্তাহিক ছুটি। এ ছাড়া বিভাগীয় ও জেলাশহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থার জন্য বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে সেনাবাহিনী নিয়োজিত হবে।
এ সময় কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান, খাবারের দোকান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রির দোকান ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সব ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়ার জন্যও নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ব্যাপক হারে গ্রামমুখী হয় অসচেতন মানুষ। এতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিলে গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ দিকে ছুটি শেষ হওয়ার আগেই দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে গত ১ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আরেকটি প্রজ্ঞাপনে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে দেয় সরকার। এই প্রজ্ঞাপনে প্রয়োজনে ঔষধ শিল্প, উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পকারখানা চালু রাখা যাবে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়। ফলে সরকার ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার সুবিধা নেয়ার সুযোগ নেয় গার্মেন্টমালিকরা। তারা ৫ তারিখে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে। বেতন ও চাকরির অনিশ্চয়তার ভয়ে শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামাজিক দূরুত্ব উপেক্ষা করে এমনকি গণপরিবহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলের দিকে রওনা দেয়।
বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার ও বিজিএমইএ। রাজধানীমুখী মানুষের ঢল ঠেকাতে শনিবার রাতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন স্বরাষ্টমন্ত্রী।
করোনায় আক্রান্ত রোগীর সেবায় নিয়োজিতরা মানসম্মত পিপিই পাচ্ছেন না। এই দুর্যোগে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে তাদের জন্য নেই কোনো প্রণোদনা। ফলে তারা কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপত্তার অভাবে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছেন। তার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের উৎসাহিত করতে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে মূলত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
গত ১ এপ্রিল সরকারি ছুটি বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই প্রজ্ঞাপনে সচিব, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ ১৬ জনকে দেয়া হলে দেয়া হয়নি সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার পুলিশ মহাপরিদর্শককে। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পুলিশ ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা।
রাজধানীমুখী মানুষের ঢল থামাতে আইজিপিকে নির্দেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর : বিজিএমইএ গার্মেন্ট খোলার ঘোষণা দিলে রাজধানীর আশপাশের ঢল নামে পোশাক শ্রমিকদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা রাস্তায় বেরিয়ে পড়লে সেটি সামাজিক ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। পরে রাজধানীমুখী মানুষের ঢল থামাতে শনিবার রাত ১০ টার দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারীকে নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রাতে মন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, আর যেন কাউকে রাজধানীতে ঢুকতে না দেয়া হয় সে জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে এ ছাড়া পোশাকশ্রমিকদের বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে বিজিএমইএকে বলা হয়েছে।